বাঘারপাড়া প্রতিনিধিঃ যশোরের বাঘারপাড়ার প্রেমচারা গ্রামের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এক সাক্ষীর ভাই তফসির মোল্লা হত্যাকান্ডের পর তিনটি বছর পেরিয়ে গেলো। ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট নিজ বাড়ির বারান্দায় তাকে গলা কেটে হত্যা করে কুখ্যাত আমজেদ রাজাকারের সহযোগীরা। এই তিন বছরে কোনো আসামি আটকের নজির নেই। একজনকে আটক করা হলেও তাকে আসামির তালিকায় রাখা হয়নি।
এ নিয়ে বহু দেন-দরবার, বহু আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তোলার পরও একজন আসামিও গ্রেফতার হয়নি। বরং সম্প্রতি মামলাটির ফাইনাল রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। যাতে হতাশায় নিমজ্জিত হয়েছেন নিহতের সন্তানসহ পরিবারের সদস্যরা। আর যুদ্ধাপরাধ মামলার বাদী ও অপরাপর স্বাক্ষীরা রয়েছেন উদ্বেগ-উৎকন্ঠায়। তারা নিজের জীবন নিয়েই এখন শঙ্কায় রয়েছেন।
২০১৮ সালের ৮ আগস্ট ভোরে প্রেমচারা গ্রামে নিজ ঘরের বারান্দায় তফসীর মোল্লার গলা কাটা লাশ উদ্ধার হয়। ঐ দিন বিকেলেই নিহতের পরিবারের কাউকে বাদী হওয়ার সুযোগ না দিয়ে কতোকটা তাড়াহুড়ো করে বাঘারপাড়া থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে পলিশ বাদী মামলা হয়। অথচ, এই হত্যা নিয়ে নিহতের পরিবারের সুস্পষ্ট অভিযোগ ছিলো। পুলিশের রহস্যজনক আচরণে নিহতের পরিবার আশঙ্কা করে তারা ন্যায় বিচার পাবে না। যে কারণে নিহতের ছেলে তৈয়েবুর রহমান ৯ আগস্ট যশোরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিট্রেট আদালতে মামলা করেন। মামলায় তিনি উল্লেখ করেন, নিহত তফসীর মোল্লার ভাই অর্থাৎ বাদীর চাচা এহিয়ার রহমান কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী আমজেদ মোল্লার যুদ্ধাপরাধ মামলার একজন স্বাক্ষী। তিনি যাতে আদালতে স্বাক্ষী দিতে না যান এজন্য ২০১৮ সালের ১৭ জুলাই তাদের বাড়িতে হামলা করে ভাংচুর, লুটপাট এবং মারপিট করে। সন্ত্রাসীরা হুমকি দিয়ে বলে যায়, যদি যুদ্ধাপরাধ মামলার পক্ষে তারা থাকে তবে তাদের সবাইকে একে একে হত্যা করা হবে। সে হুমকির অংশ হিসেবেই তফসীর মোল্লাকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। ঐ মামলায় যুদ্ধাপরাধ মামলার আসামি আমজেদ মোল্লার ছেলে খোকন মোল্লাসহ ২১জনকে আসামি করা হয়। এসব আসামি ধরতে এবং তফসীর হত্যা মামলার ন্যায় বিচার দাবিতে ২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট যশোর প্রেসক্লাবের সামনে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এক মানববন্ধনের আয়োজন করে। সেখানে যশোরের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এসময় বক্তারা বলেন, ‘মানবতাবিরোধী মামলায় অভিযুক্ত ‘রাজাকার’ আমজাদ হোসেনের মামলায় সাক্ষ্য দিতে নিষেধ করে আমজাদের ছেলে খোকন ও তার বাহিনী। তারা শাসায়, ‘যদি সাক্ষ্য থেকে না ফিরে আসেন, তাহলে তার বংশে বাদী হওয়ার মতো কাউকে রাখা হবে না। কিন্তু তিনি সিদ্ধান্তে অবিচল থাকায় তফসির মোল্লাকে নৃশংসভাবে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। আমরা অবিলম্বে এই হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।’
তবে এসব কিছুর পরও গত ১৮ জুলাই মামলাটির চূড়ান্ত রিপোর্ট দিয়েছে যশোর সিআইডি। আর যুদ্ধাপরাধী আমজেদ মোল্লাও রয়েছেন জামিনে। আর এই ক্ষোভ, দুঃখ, হতাশা ও আতঙ্ক নিয়ে ৮ আগস্ট নিহত তফসীর মোল্লার পরিবার দোয়া মাহফিলের মধ্য দিয়ে তৃতীয় হত্যা বার্ষিকী পালন করেছে। এখন আদালতই তাদের বিচার পাওয়ার একমাত্র ভরসা।